বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে টেকসই ও নিরাপদ করতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০% নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর জ্বালানি নীতি গ্রহণ করা হবে। বিশেষ জোর দেয়া হবে পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদনে। অতি কল্পনারও কিছু সীমা থাকা উচিৎ। যেখানে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যেখানে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে শুধুমাত্র এই দুটি ইউনিটে, সেখানে বিএনপির নবায়নযোগ্য জ্বালানীর নির্ভরতা স্রেফ রাজনৈতিক স্টান্টবাজির জন্য রুপকথার গল্প। আসুন, একটু হিসাব করি।
দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ন্যূনতম ২৫ হাজার মেগাওয়াট হিসাব করলে তার অর্ধেক, অর্থাৎ সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় বিএনপি শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য শক্তি তথা বায়ু, সৌর বা পানি থেকে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বিশালাকৃতির উইন্ড টারবাইন ঘোরানোর মত পর্যাপ্ত বায়ু প্রবাহিত হয়, এমন স্থান খুব বেশি নেই দেশে। সক্ষমতা পরীক্ষা করে যে কয়টি স্থান নির্বাচিত হয়েছে, সেখানে সরকার ইতিমধ্যে উইন্ডমিল বসিয়েছে, যা থেকে খুব বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। কক্সবাজারের খুরুশকুলে বায়ু বিদ্যুৎপ্রকল্প চালু হচ্ছে এ বছরই, তাতে উৎপাদিত হবে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
এছাড়া ইনানীতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন আরও একটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত করা হবে শীঘ্রই। স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, সক্ষমতা যাচাই এবং বিশাল এলাকাজুড়ে স্থাপিত হয় এসব টারবাইন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নযন বোর্ড (পিডিবি) ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে ৪টি টারবাইন স্থাপন করে সোনাগাজী উপজেলার ফেনী নদীর ওপর নির্মিত ফেনী রেগুলেটরের (মুহুরী সেচ প্রকল্প হিসেবে পরিচিত) প্রায় ৫০০ গজ দূরে থাক খোয়াজের লামছি গ্রামে। যার ক্ষমতা মাত্র ২২৫ কিলোওয়াট। [১ হাজার কিলোওয়াট = ১ মেগাওয়াট]।
এবার আসা যাক সৌর বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে। সৌর বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজন বিস্তীর্ণ ভূমি, যেখানে সূর্যের আলো ধরতে বিপুল এলাকাজুড়ে বিছিয়ে রাখতে হয় সোলার প্যানেল, মনুষ্যবিহীন অত বিস্তীর্ণ এলাকা দেশে কোথায়? মাত্র ১ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২.৫ একর জায়গা প্রয়োজন। ১২ হাজার মেগাওয়াটের জন্য তাহলে কত জায়গা প্রয়োজন, ভাবুন তো? সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সোলার প্যানেল অত্যন্ত খরুচে ব্যাপার। আর এর যন্ত্রাংশের নিয়মিত মেইন্টেন্যান্স করতে হয়। এছাড়া সূর্যের পর্যাপ্ত আলো প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করছে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
জলবিদ্যুৎ কোনো ছেলেখেলা নয়। পড়ন্ত বা স্রোত আছে এমন নদীর পানির চাপকে ব্যবহার করে তৈরি করা হয় জলবিদ্যুৎ। সাধারণত পাহাড়ি কোনো খরস্রোতা নদীতে বাঁধ দিয়েই এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন পাহাড়ি খরস্রোতা নদী নেই, যাতে এ ধরণের প্রকল্প করা যায়। বিএনপি মানুষকে বোকা বানানোর জন্যই এসব উদ্ভট পরিকল্পনা সামনে এনেছে। নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করতে পারলে তা দেশের জন্যই লাভজনক। কিন্তু বিশ্বের অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে বর্তমানে সবদিক থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রই উপযুক্ত বলে সরকার সেটাই বিবেচনায় নিয়েছে।