বিআইসিটিএল নিউজ ডেস্কঃ
দিন মজুর, কেউ ভিক্ষুক, কেউ শ্রমিক, কেউ প্রতিবন্ধী, কেউ বিধবা, কেউ স্বামী পরিত্যক্তা, কেউ ভবঘুরে, কেউ কৃষক, কেউ দরিদ্র গৃহিণী, কেউ ভ্যানচালক, কেউবা স্বামী পরিত্যক্তা, কেউ অন্যান্য পেশায় যুক্ত। কারও সঙ্গে কারও মিল নেই। তবে দরিদ্র এই মানুষগুলোর মিল শুধু একটি জায়গায়। তাদের মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই নেই। তারা ভূমিহীন-গৃহহীন। দিন আনতে যাদের পানতা ফুরোয় তাদের কি ঘরের বিলাসিতা মানায়? এতদিন এটিই হয়তো স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হতো। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। এখন আর সেই বাস্তবতা নেই। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এই সময়ের মধ্যে একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না। এটি আমার কথা নয়। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উক্তি।
মুজিববর্ষে একজনও গৃহহীন থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকারের ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ৪৯২টি উপজেলার ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের হাতে বিনামূল্যে ঘরের চাবি তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব, এর চেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশের মানুষের আর হতে পারে না, একদিনে এত মানুষকে ঘর দিতে পারলাম, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এ-সময়ের মধ্যে একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না।
যাদের গৃহ নেই তাদের ঘর করে দিতে পারা অসাধ্য সাধন করতে পারলাম, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর হতে পারে না।’ যারা স্বপ্নেও কখনও ভাবেনি যে তাদের নিজের একটা ঘর হবে, তারাও আজকে একটি ঘরের মালিক হচ্ছে- তাদের মাথা গোঁজার একটি স্থায়ী ঠাঁই হচ্ছে। আর এই নজিরবিহীন উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা। একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান করার উদ্যোগ বিশ্বের ইতিহাসে বিরল একটি ঘটনা।
মানুষের জন্য তিনি রাজনীতি করেন বলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই তার ব্রত এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই তার আরাধ্য বলে তার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে এত মানুষকে একসঙ্গে বিনামূল্যে ঘর প্রদানের মতো একটি দুঃসাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করা। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়ে তিনি স্বীয় পিতার কাছ থেকেই শিখেছেন কীভাবে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে হয়। দেখেছেন স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের জন্য তার পিতাকে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নের সোনার বাংলার অভিযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়, যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিপন্ন হয়ে পড়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। দেশ পদদলিত হয়, মুখ থুবড়ে পড়ে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। বিপন্ন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ, বিপন্ন দেশের মানুষ। সে-সময় শোককে শক্তিতে পরিণত করে প্রাণের মায়াকে তুচ্ছ করে বাংলার দুঃখী মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘আমি সব হারিয়ে আজ আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি শুধু আমার পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য। প্রয়োজনে পিতার মতো জীবন দিব, তবু আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আপস করব না।’
দ্বিতীয় ধাপে গত ২০ জুন আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ‘স্বপ্নের স্থায়ী নীড়, স্বপ্নের নিজস্ব ঠিকানা’ ঘর প্রদান করা হয়। এই উদ্যোগের আওতায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১ লাখ পরিবারকে ঘর প্রদান করা হবে। এসব ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তার এই সাহসী উচ্চারণের প্রতিফলন ঘটেছে তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমায়। বারবার তার ওপর আঘাত এসেছে। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও এত আঘাত, এত জেল-জুলুম, এত প্রাণনাশের চেষ্টা তাকে বিন্দু পরিমাণও বিচ্যুত করতে পারেনি তার আপন প্রতিজ্ঞা থেকে। রাজপথে, আন্দোলনে কিংবা ক্ষমতায় যেখানেই থাকুন না কেন, তার রাজনীতির মূল দশর্নই হচ্ছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অঙ্গীকার। বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রকে জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধনকল্পে নাগরিকদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের এ-কথার অনুরণনও আমরা দেখতে পাই দেশরত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনায়। তিনি বলেন, ‘আমরা শত্রুকে মোকাবেলা করে, যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। এখন আমাদের যে যুদ্ধ সেটা হচ্ছে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। কাজেই আমাদের এখন সবচেয়ে প্রধান শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য। এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে, অর্থাৎ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করতে হবে।’
এ-কথা বলেই তিনি থেমে থাকেননি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’, ‘শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন’, ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র মতো যুগান্তকারী সব উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেছেন।
১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বিপন্ন মানুষের আশ্রয় ও গৃহহীনে আবাসন নিশ্চিত করার ভিশন নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৮টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। জমি আছে ঘর নেই- এমন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৪টি পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নোয়াখালী জেলার (বর্তমান লক্ষ্মীপুর) চর পোরাগাছা পরিদর্শকালে ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায় লোকদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার সেই নির্দেশনা আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে তারই কন্যার হাত ধরে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিধি বৃদ্ধি করে সবার জন্য বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, দেশে একজনও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই ঐতিহাসিক ঘোষণার প্রেক্ষিতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দুই ধরনের ক্যাটাগরিতে প্রায় ৯ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ করা নকশা অনুসারে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এই ঘরগুলো। ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট। সে-সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। ঘরের সঙ্গে সঙ্গে বরাদ্দপ্রাপ্তদের কবুলিয়াত দলিল, নামজারি, খতিয়ানসহ অন্যান্য কাগজপত্র তুলে দেওয়া হয়।
এই উদ্যোগের দ্বিতীয় ধাপে গত ২০ জুন আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ‘স্বপ্নের স্থায়ী নীড়, স্বপ্নের নিজস্ব ঠিকানা’ ঘর প্রদান করা হয়।
এই উদ্যোগের আওতায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১ লাখ পরিবারকে ঘর প্রদান করা হবে। এসব ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরা পাশাপাশি রয়েছে কক্সবাজারে খুরুশকূল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ১৯টি বহুতল ভবনে ৬০০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদান করেন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১৯টি বহুতল ভবনে আরও ৩ হাজার ৮০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা দাঁড়াবে পৌনে ১১ লাখে। প্রতি পরিবারে গড়ে পাঁচজন হিসেবে উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ।
বিনামূল্যে এত মানুষকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নজিরবিহীন। এজন্য দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবৃন্দও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলী, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাশেদা কে চৌধুরী, অধ্যাপক এমএম আকাশ, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, অ্যাডভোকেট এসএমএ সবুর, খুশী কবির প্রমুখ।
মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, এগিয়ে চলেছে অদম্য গতিতে। আর এটি সম্ভব হয়েছে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, গতিশীল সাহসী নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক দর্শনের কারণে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে বিভিন্ন দেশ আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ‘ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানাই।… আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গতিশীল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে।… শেখ মুজিবুর রহমান তার দেশ ও জনগণের জন্য যে সোনার বাংলার কথা ভেবেছিলেন, যে অর্থনীতির কথা ভেবেছিলেন তা বাস্তব।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এ-কথাগুলো বলেছিলেন।
বিশ্বের বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। এটি বাংলাদেশের অনেক বড় কৃতিত্ব। এসব বিষয়ে সকলেরই বাংলাদেশের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’ এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন রূপায়ণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সূত্রঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।