পায়রাসেতু ২০২১ সালে ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বিভাগের পিরোজপুরের বেকুটিয়ার কচা নদীর ওপর এবং পটুয়াখালীর লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতু অভ্যন্তরীণ মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে।
লেবুখালি সেতু চালু হওয়ার পর বিভাগের হেডকোয়ার্টার বরিশাল ও ঝালকাঠির সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি পটুয়াখালী ও বরগুনার জেলার আমতলীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।
এতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনপদে চলমান উন্নয়ন কাজে আরও গতিসঞ্চার হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক মাসে পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্নস্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক নতুন নতুন কাজও শুরু হতে দেখা গেছে। ফলে ২০২১ সালে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এটা ছিল এক ধরনের পুরস্কার।
এ সেতুতে যান চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে স্বল্প সময়ে সড়কপথে সরাসরি পায়রা বন্দরসহ পর্যটনকেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটায় যাতায়াত করাও সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, পায়রা সেতু অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সেসঙ্গে পিছিয়ে পড়া ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। এছাড়া পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি চালু হলে পিরোজপুর ও বরগুনার পাথরঘাটার সঙ্গে ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপন হবে। খুলনার সঙ্গে বাগেরহাট হয়ে সরাসরি বরিশাল-পটুয়াখালীর সড়কপথে যাতায়াত ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে।
ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, পায়রা সেতুর চালু হওয়ার পর কুয়াকাটা পর্যটকদের উপস্থিতি বিগত সময়ের থেকে বেড়েছে। সেসঙ্গে অন্যান্য পর্যটনস্পটগুলোরও গুরুত্ব বেড়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটতেও শুরু করেছে।
অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে বরিশাল বিভাগে তেমন কোনো উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়নি। তবে, বর্তমান সরকারের আমলে বড় বড় প্রকল্পের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং হচ্ছে। পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা সেনানিবাস স্থাপন, বিমানবাহিনীর রাডার স্টেশন স্থাপন, প্রকৌশল কলেজ, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর, পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি সড়কপথের উন্নয়নে ছোট-বড় বহু সেতু এ অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, শেখ জামাল, শেখ কামাল ও শেখ রাসেল সেতু, পায়রা সেতু, বরিশাল-পিরোজপুর মহাসড়কের কচা নদীর ওপর বেকুটিয়া সেতু উল্লেখযোগ্য।
এসব কিছু মিলিয়ে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে একসময়ের অবহেলিত জনপদ দক্ষিণাঞ্চলে। উন্নয়ন মহাযজ্ঞে এরইমধ্যে জমিজমার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। পায়রা বন্দর ঘিরে ওই এলাকায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়েছে। পাল্টে যাচ্ছে এ অঞ্চলের চেহারা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরেই বরিশাল দেশের অন্যতম শিল্পবাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকদের।
সূত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম।