দীর্ঘ সংগ্রাম এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি শোষকদের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি লাভ করে বাংলাদেশ। কিন্তু বীরের বেশে বিজয়ী এই জাতির ক্রান্তিকাল তখনো শেষ হয়নি। সাত কোটি বাঙালির মুক্তিদাতা ও সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনো পাকিস্তানের জেলে। জাতির মুক্তির আলো জ্বেলে তিনি নিজে তখনো সমুন্নত চিত্তে অন্ধকার কবরের প্রতীক্ষা করছেন। বেঁচে থাকার প্রলোভন দূরে ঠেলে দিয়ে তিনি তখনো কোনো আপোসের পথে হাঁটেননি। অবশেষে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে বাঙালি জাতির মহানায়ককে ফেরত দিতে বাধ্য হয় পরাজিত পাকিস্তানিরা। এরপর লন্ডন ও দিল্লিতে কূটনৈতিক যাত্রাবিরতি সেরে, ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরের মাটি স্পর্শ করে নেতাকে বহন করা ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানটি। অধীর অপেক্ষার প্রহর শেষে উল্লাসে ফেটে পড়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের স্বজনহারা সাত কোটি বাঙালি। শীতের নিস্প্রাণ পড়ন্ত বিকেল মুহূর্তেই মায়াময় হয়ে ওঠে। লাখো জনতার আনন্দঅশ্রুতে সিক্ত হয়ে ওঠে নগরী।
ধর্ম-বর্ণ নির্বশেষে সাত কোটি বাঙালির হৃদয়ে তুমুল জাতীয়তাবোধ সঞ্চারণ করে, ধাপে ধাপে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন যিনি; যার সরাসরি নির্দেশে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে নেমেছে সর্বোস্তরের মানুষ, যার জাদুকরী নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম লাভ করে বাংলাদেশ নামক এই জাতিরাষ্ট্র, সেই মহামানবকে একনজর দেখতে বিমানবন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত জনসমুদ্র প্লাবিত হতে থাকে আবেগের ঢেউয়ে।
বিমানের দরজা খুলে উপস্থিত জনতার দিকে তাকালেন বঙ্গবন্ধু। মুক্ত দেশের মাটিতে পা রেখে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পরলেন না। নিশ্চিত মৃত্যু যাকে টলাতে পারেনি, জেলে কবরের সামনে দাঁড়িয়ে যিনি বলেছেন- বাঙালি একবার মরে, দুইবার না; সেই সিংহপুরুষের দুচোখ বেয়ে অবিরত অশ্রু গড়াতে থাকে। একে একে জড়িয়ে ধরেন উপস্থিত জনসাধারণ এবং পরিবারের সদস্যদের।
এরপর, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে, জনসমুদ্রের ভালোবাসা ছুঁয়ে, একটি খোলা ট্রাকে চড়ে ধীরে ধীরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে এগিয়ে যান তিনি। যে ময়দানে ৭ মার্চ অনলবর্ষী বক্তব্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই ময়দানেই এবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভেঙে পড়লেন, অতঃপর নতুন দেশকে গড়ে তোলার ঘোষণা দিলেন বাঙালির ভালোবাসায় সিক্ত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
Video Courtesy: Special Security Forces (SSF)